গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ শামীম আখতারের বিরুদ্ধে তিনটি অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লিখিত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তিন সদস্যের ওই কমিটি গঠন করে। কমিটি দীর্ঘ সময় পার করে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, কাজ শেষ করার আগেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ, দরপত্র আহ্বান না করেই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন শুরু করা এবং প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত না করেই ৯০ শতাংশ বিল পরিশোধের মতো তিনটি অনিয়মের সত্যতা মিলেছে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হলেও ৫টির সত্যতা মেলেনি। একটি অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেনি কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, বিস্তর অভিযোগের কারণে তদন্ত কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তবে এখানে তিনটি অভিযোগের সত্যতা পেলেও বেশির ভাগেরই সত্যতা মেলেনি। যেহেতু অভিযুক্ত কর্মকর্তা সংস্থাপ্রধান, তাই প্রতিবেদনের আলোকে ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচবিআরআইয়ের গবেষণা খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গবেষণা খাতের সেই বরাদ্দ থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় ‘অটোমেটিক ব্লক মেকিং প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হয়। প্ল্যান্টটি পুরোপুরি চালু অবস্থায় বুঝে না পেয়েই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্সকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো কারিগরি কমিটিও করা হয়নি। তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শনে প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পায়। এ ছাড়া প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশে মরিচে ধরে মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই প্ল্যান্টের শেড নির্মাণের জন্য ৭০ লাখ টাকার কাজে কোনো চুক্তি ছাড়াই কিংডম বিল্ডার্সকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের হলেও নথিতে রক্ষিত চুক্তিপত্রটি ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত। এতে প্রতীয়মান হয়, চুক্তিপত্রটি যথাসময়ে স্বাক্ষর না করে পরে করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পটি চুক্তি স্বাক্ষর না করেই বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।
প্রতিবেদনের মতে, দৈনিক ২০ ঘনমিটার ব্লক উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যে ‘এএসি প্ল্যান্ট’ উন্নয়নকাজে ২০১৯ সালে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। কাজটি করে কিংডম বিল্ডার্স, অর্থী এন্টারপ্রাইজ ও জামান বিল্ডার্স। ঠিকাদারদের সিংহভাগ বিল দেওয়া হলেও প্ল্যান্ট এখনো চালু হয়নি।
তদন্ত কমিটি সরেজমিনে দেখতে পায়, প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিল প্রদানের ক্ষেত্রে প্রথা অনুযায়ী মেজারম্যান্ট বুক যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় কাজের বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে বিল পরিশোধের সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়নি। উচ্চ কারিগরি যন্ত্রপাতি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির গুণগত মান নিশ্চিত না হয়েই প্রায় ৯০ শতাংশ বিল প্রদান করে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ আব্দুল্লাহ আল খায়রুমের সই করা এক চিঠিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর গত ২৩ জানুয়ারি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং) ড. মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়। এই কমিটি সাত মাস পর মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি কী পেয়েছে বা পায়নি, তা-ও আমার জানা নেই।
সূত্র—এপি/সকালের-সময়/ফোরকান