চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবিন মোরশেদ বেসিক ব্যাংকে ঋণখেলাপি। আর এ খেলাপি ঋণ পরিশোধ করতে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত মাহজাবিনসহ অন্যদের ৬০ দিন সময় দেয়।
তিনি প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক। আর প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণশুনানির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়।
চট্টগ্রাম অর্থ আদালত সূত্রে জানা যায়, মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও মাহজাবিন মোরশেদসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়েছেন ক্রিস্টাল গ্রুপ। এছাড়া তিনি ও তার পরিবারের একাধিক সদস্য প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মালিকানায় আছে। ক্রিস্টাল গ্রুপ বেসিক, রূপালী, ফারমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়।
এর মধ্যে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি। এ ক্রিস্টাল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইজি নেভিগেশনকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে বেসিক ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা (সুদসহ) দাঁড়িয়েছে ১৮৩ কোটি ৭১ লাখ। এ পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে।
এ মামলার শুনানি শেষে আদালত সম্প্রতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এবং স্ত্রী মাহজাবিন মোরশেদসহ অন্য পরিচালকদের ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি পাওনা পরিশোধের আদেশ দেন। এর আগে একটি আদেশে তাদের পাসপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার আদেশ দেয়া হলেও তারা পাসপোর্ট জমা দেননি।
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দেয়া তথ্যানুসারে, মাহজাবিন মোরশেদ প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডোর পরিচালক। তার দুই ছেলে সামির সেকান্দার ও মেহের সেকান্দার, বড় পুত্রবধূ আফরা চৌধুরী এবং দেবরের বউ কানিজ ফাতেমা পরিচালক হিসাবে পরিচালনা পর্ষদে আছেন। সামির সেকান্দার কোম্পানির চেয়ারম্যান। এছাড়া উদ্যোক্তা হিসেবে একই পরিবারের সদস্য জাহিদ হোসেন মিয়া এবং রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিম।
ক্রিস্টাল গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি। পরিশোধে যথেষ্ট সময় পেলেও ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সুবিধা দিলেও সেই সুবিধার আওতায় আবেদনও করেনি। বরং মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন।
মোরশেদ মুরাদ ও মাহজাবিন মোরশেদ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কবে ফিরবেন, আদৌ ফিরবেন কিনা সেটিও কেউ জানে না চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, মুরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, মাহজাবিন মোরশেদ এবং অন্য পরিচালকরা বেসিক ব্যাংকে ঋণখেলাপি।
কোম্পানি আইন ১৯৯২ (২০১৮ সালে সংশোধিত) ১৭ ধারা বলা আছে, কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা বিমা কোম্পানির পরিচালক যে ব্যাংকে ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন, সেই ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি পরিচালককে দুই মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধে নোটিশ প্রদান করে। আর এ সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পরিচালক পদ শূন্য হয়।
এ বিষয়ে মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ করেছি। আমাদের ঋণ কম সেই তুলনায় আমাদের সম্পদ বেশি। ফলে পাওনা পরিশোধে তেমন সময় লাগবে না। আমি সিঙ্গাপুরে আছি। দেশে এলে আলাপ করব।
সূত্র—এসবি/সকালের-সময়/ফোরকান